লেবু দিয়ে ব্রণ দূর করার সেরা উপায় ও ঔষধের নাম

ব্রণ আমাদের মুখের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। ব্রণ শুধু মুখেই নয় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হয়ে থাকে। ব্রণ হলে আমাদের সৌন্দর্যে একটা খারাপ প্রভাব পড়ে, সেই সাথে আমাদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়, হীনমন্যতা সৃষ্টি হয় ইত্যাদি। শুধু মাত্র বয়স বাড়লেই ব্রণ হয় এটা ভুল ধারণা।
লেবু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
ব্রণ বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে যেমন, হরমোন জনিত সমস্যার কারণে, অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে, খুব বেশি রোদে থাকা, আগুনের তাপে রান্নাবান্না করা ইত্যাদি কারণেও ব্রণের সমস্যা হয়ে থাকে। যেসকল দাগ খুব বেশি জটিল নয় সেগুলো আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে দূর করতে পারি এবং এজন্য লেবুর ভূমিকা অপরিসীম।

লেবু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

লেবুর রস ত্বকে ব্লিচের মতো কাজ করে, ব্রণের দাগগুলি হালকা করে এবং একটা ফর্সা ভাব নিয়ে আসে। আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন লেবু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে। লেবুর কার্যকারিতা বা ব্রণের সমস্যায় লেবুর উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড মুখের স্কিন টোন সমান করে এবং উজ্জ্বল করে। তবে যাদের মুখে ব্রণের জায়গায় ঘা থাকে তাদের ত্বকে লেবু ব্যবহার করা যাবে না। আসুন নিচে লেবুর রস ব্যবহারের বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো তা জেনে নেই।

লেবুর রসের সাথে পানি মিশিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

লেবুর সাথে বিভিন্ন কিছু উপাদান মিশিয়ে পেস্ট করে তা ব্রণ দূর করার জন্য তা ব্যবহার করা যায়। সেরকমই একটি পদ্ধতি হচ্ছে লেবুর রস ও পানি মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করা। যেমন:-
  • প্রথমে লেবুর রস একটি পাত্রে নিংড়ে বের করে নিতে হবে এবং সাথে একটু পানি মিশিয়ে নিতে হবে।
  • হাত ব্যবহার না করে তুলা ব্যবহার করে আস্তে আস্তে ব্রণের জায়গায় বা অন্যান্য জায়গায় লেবুর রস লাগিয়ে নিতে হবে।
  • ১০-১৫ মিনিট যাবার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুখ মুছে নিতে হবে।
  • এভাবে সপ্তাহে দুইবার লেবুর রস ব্যবহারে ব্রণের সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়।

লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

  • প্রথমে লেবুর রস একটা পাত্রে নিংড়ে নিতে হবে এবং সাথে সামান্য পরিমাণ মধু নিতে হবে।
  • এরপর তুলো ব্যবহার করে আস্তে আস্তে ব্রণের জায়গায় লাগিয়ে নিতে হবে।
  • এভাবে ১৫ মিনিট রেখে দিয়ে মুখ ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুখ মুছে নিতে হবে।
  • এই প্যাকটি আপনি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন এবং এর মাধ্যমে আপনার স্কিনে ব্রণের জন্য কালো দাগের সমস্যা দূর হবে এবং স্কিন উজ্জ্বল হবে।

লেবুর রস ও দুধ মিশিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

  • প্রথমে একটি পাত্রে লেবুর রস ও দুধ নিতে হবে ।
  • উপাদান দুটি খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
  • সারা মুখে বা যেখানে ব্রণ আছে সেখানে লাগিয়ে নিতে হবে।
  • ১৫ মিনিট পর মুখ পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • এই লেবুর রসের প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বকের কালচে ভাব দূর হবার পাশাপাশি স্কিন ব্রাইট করবে।

লেবুর রসের সাথে কমলার রস মিশিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

  • লেবুর রস দিয়ে ব্রণ দূর করার জন্য লেবুর রসের সাথে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয় তারমধ্যে এটা সবথেকে কার্যকরী উপায়।
  • লেবুর রস ও কমলার রস একটি পাত্রে মিশিয়ে নিতে হবে।
  • মুখে কিংবা ব্রণ যেখানে আছে সেখানে লাগিয়ে নিতে হবে।
  • ২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • এই পদ্ধতিতে মুখের ব্রণের দাগ দূর হবার সাথে সাথে স্কিন অনেক ব্রাইট হয়ে যাবে।

ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায়

ব্রণের সমস্যা কেবলমাত্র নারীদেরই নয় পুরুষদের জন্যও একটি বড় সমস্যা। যেহেতু পুরুষদের দিনের বেশির ভাগ সময়ই বাইরে কাটাতে হয়, তাই তাদের ত্বকের উপরও রোদ বা ঘামের অনেক প্রভাব পড়ে। তৈলাক্ত ত্বক, ত্বকের অযত্ন, অতিরিক্ত রোদ, ধুলোবালি এসব কারণে পুরুষের ব্রণের সমস্যা হয়ে থাকে।
  • এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত যত্ন, ভালো ঘুম, পরিমিত পুষ্টিকর খাবার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন ঘরোয়া টোটকার মাধ্যমে ব্রণের সমস্যা অনেকটা সমাধান করা যায়।
  • ডিমের সাদা অংশের সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে লাগিয়ে নিতে হবে এবং কিছুক্ষণ পর মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। বি.দ্র. শুধুমাত্র ডিমের সাদা অংশটুকু ব্যবহার করবেন।
  • মধু ব্যবহার না করে শুধুমাত্র ডিমের সাদা অংশ বের করে নিয়ে মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • পেঁপে মুখের ব্রণ দূর করার ভালো উপায়। এটি ত্বকের বাড়তি তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে এবং মৃত কোষ দূর করে।
  • মধু মাস্কের মতো ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • লেবুর রসে আছে সাইট্রিক এসিড যা প্রাকৃতিক Antioxidant-এর উৎস। তাই এক খণ্ড লেবু হাতে নিয়ে ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কার করলে ব্রণের সমস্যা অনেকটা দূর হয়।

কি খাবার খেলে ব্রণের সমস্যা দূর হয়?

শতকর ৮০ শতাংশ কিশোর কিশোরীদের ব্রণের সমস্যা হয়ে থাকে। বয়স, ত্বকের ধরণ ছাড়াও খাবারের উপর নির্ভর করে ব্রণের সমস্যা হতে পারে। তাই যেসব খাবার খেলে ব্রণ এবং এলার্জি হবার সম্ভাবনা বেশি হয় সেসব খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।

নিচে ব্রণের সমস্যা থেকে পরিত্রাণের কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত এবং কোনগুলো খাওয়া অনুচিত সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো :
  • ভিটামিন-সি: ভিটামিন সি ত্বক পরিষ্কার করে এবং ব্রণের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। তাই অবশ্যই ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে।
  • ওমেগা থ্রি ফ্যাট: সামুদ্রিক মাছ, স্যামন মাছ এগুলো প্রোটিনের অনেক ভালো উৎস এবং এতে “ওমেগা থ্রি” যুক্ত ফ্যাটি এসিড আছে যা আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী। সেইসাথে ব্রণের দাগ ও ব্রণের পরিমাণ কমায়।
  • Antioxidant: “Antioxidant” যুক্ত খাবার খাওয়া। এটি কোষের এবং ত্বকের উপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। দিনে সর্বোচ্চ ২৪ টি বাদাম খাওয়া উচিত।
  • বেশি জিংক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া: জিংক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া আমাদের জন্য আবশ্যক এবং এটি ত্বক উজ্জ্বল করে সেইসাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • ভিটামিন এ : ভিটামিন এ ব্রণ কমাতে উপকারী খাদ্য উপাদান। মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ থাকে যা আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী।

ব্রণ দূর করার কিছু ঔষধের নাম

ব্রণ যদি ঘরোয়া উপায়ে যা যায় তাহলে ঔষধ খেয়ে কমাতে হবে। এরকম কয়েকটি ঔষধের নাম হচ্ছে,
  • আইসোবেস্ট ১০ এমজি ক্যাপসুল (Isobest 10 mg Capsule)
  • আইসোট্রোইন ১০ এমজি ক্যাপসুল (Isotroin 10 mg Capsule)
  • সোট্রেট ১০ এমজি ক্যাপসুল ( Sotreat 10 mg capsule)
  • টোক্যাফনে ১০ এমজি ক্যাপসুল (Tufecne 10 mg capsule)
  • এছাড়াও কিছু ক্রিম আছে যেগুলো ব্যবহারে মুখের ব্রণ এবং দাগ উভয়ই দূর হয়। যেমন,
  • নোভাক্লিয়ার একনি ক্রিম
  • নোভাক্লিয়ার একনি ক্লিনজার
  • নরম্যাকনে একনি স্পট ক্লিনজার

শেষকথা

প্রতিটা মানুষই চায় একটি ব্রণহীন পরিষ্কার মুখ ও শরীর। কিন্তু বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত পরিবেশ দূষণ এবং ধুলোবালির কারণে কিশোর থেকে শুরু করে বয়স্ক সবাই অনেক ব্রণের সমস্যায় ভোগে। বিশেষ করে কম বয়সীরা। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানের উপায়ও অবশ্যই আছে।

সচেতন থাকার মাধ্যমে, ঘরোয়া নানান পদ্ধতি ব্যবহারে, ঔষধ সেবনের মাধ্যমে, খাবারে সচেতন থাকার মাধ্যমে ব্রণের সমস্যা সমাধান করা যায়। তাই উদ্বিগ্ন না হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সমস্যা সমাধান হবে যদি সঠিক পরিচর্যা করতে পারি।

আমাদের আজকের পোস্ট লেবু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা সবাই জানি, লেবু আমাদের শরীরের জন্য খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। এবং অবশ্যই শরীরকে প্রতিনিয়ত সুস্থ রাখতে পরিমাণ মতো পানি পান করবেন, নিয়মিত ব্যায়াম করবেন।

FAQ: লেবু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায় - ব্রণ দূর করার কিছু ঔষধের নাম

১. লেবু খেলে কি ব্রণ দূর হয়?

উত্তর: লেবু ত্বকের কোলাজেন গঠনে এবং ব্রণ ও ব্রণের দাগ ছোপ কমাতে সাহায্য করে। মুখে লেবুর রস না লাগিয়ে, লেবুর রস টা পান করলে বেশি উপকার পাবেন।

২. চিনি ও লেবুর রস মুখে দিলে কি হয়?

উত্তর: ত্বক উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রে লেবু খুবই কার্যকরী এবং লেবু প্রাকৃতিক ভাবে ত্বকের ট্যানও দূর করে। চিনি আর লেবু এর সঙ্গে মিশে স্ক্রাব করলে ত্বকে লেগে থাকা ধুলোবালি, ময়লা অপসারণ হয় এবং মুখে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফুটে ওঠে। অর্ধেক লেবুর সাথে এক টেবিল চা চামচ চিনি মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

৩. বোতল জাত লেবুর রস খাওয়া কি ভালো?

উত্তর: তাজা লেবুর রসের মধ্যে বোতল জাত লেবুর রসের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি ভিটামিন সি থাকে। এগুলো উভয়ই ভিটামিন সি, ফোলেট এবং পটাসিয়ামের ভালো উৎস।

৪. লেবু পানি খেলে কি আলসার হয়?

উত্তর: লেবুর উপকারিতা সঙ্গে লেবুর অপব্যবহার ও রয়েছে। লেবুর অপব্যবহার একটি অনুকূল কারণ যা অতিরিক্ত অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং ফলস্বরূপ পেটের আলসার হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। অতিরিক্ত অ্যাসিডের সমস্যা থাকলে, লেবু পানি না খাওয়াই ভালো।

৫. লেবু পানি কত দিন পর পর খাওয়া উচিত?

উত্তর: প্রতিদিন এক গ্লাস লেবু জল যার মধ্যে একটি লেবুর রস থাকবে, এই পরিমাণ লেবুর রস প্রতিদিন খাওয়ার জন্য যথেষ্ট।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url