ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস: কেন এটাই সবচেয়ে ভয়ংকর?

"মেনিনজাইটিস" নামটা শুনলেই ভয় লাগে, তাই না? আর এই ভয় পাওয়াটা একেবারেই অমূলক নয়। মেনিনজাইটিস মানে হলো আমাদের মস্তিষ্ক আর স্পাইনাল কর্ডকে ঘিরে থাকা একটি পাতলা, সুরক্ষামূলক পর্দার (মেনিনজেস) গুরুতর ইনফেকশন বা প্রদাহ। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এমনকি ফাঙ্গাস থেকেও এই ইনফেকশন হতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এবং ডাক্তাররা একমত যে এর মধ্যে ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসই (Bacterial Meningitis) সবচেয়ে ভয়ংকর এবং জীবন-নাশের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস: কেন এটাই সবচেয়ে ভয়ংকর?


কেন ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসকে সবচেয়ে ভয়ংকর বলা হয়?

১. অত্যন্ত দ্রুত বিস্তার ও মারাত্মক পরিণতি:

 ভাইরাল মেনিনজাইটিসের তুলনায় ব্যাকটেরিয়াল ধরনটা অবিশ্বাস্য রকম দ্রুত বাড়ে (কখনো কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই!)।

ব্যাকটেরিয়াগুলো খুব দ্রুত সংখ্যায় বাড়তে বাড়তে মস্তিষ্কের চারপাশের তরল (সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড) দূষিত করে ফেলে এবং মস্তিষ্কের ওপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি (যেমন- শুনতে না পাওয়া, দেখতে না পাওয়া, শেখার সমস্যা, খিঁচুনি), অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া এমনকি মৃত্যুও হতে পারে খুব দ্রুত।

২. জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ:

ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হলে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অত্যন্ত জরুরি। দেরি করলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

সঠিক চিকিৎসা পেলেও অনেক ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা থেকে যায়। ভাইরাল মেনিনজাইটিস প্রায়ই নিজে নিজেই সেরে যায় বা কম জটিলতায় সেরে যায়।

একাধিক ধরণের ব্যাকটেরিয়া এই ভয়ংকর রোগ ঘটাতে পারে, যেমন- নিসেরিয়া মেনিনজাইটাইডিস (Meningococcal), স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়া (Pneumococcal), হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি (Hib)। এদের প্রত্যেকেই খুবই আক্রমণাত্মক।

ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসের সবচেয়ে ভয়াবহ দিকগুলোর একটি হলো এটি সহজেই সেপসিস বা "ব্লাড পয়জনিং"-এ পরিণত হতে পারে। এতে রক্তচাপ মারাত্মকভাবে কমে যায়, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ (যেমন কিডনি, হার্ট, ফুসফুস) কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে, যা প্রাণঘাতী। সেপসিসের কারণে শরীরে বেগুনি দাগ বা র্যাশ দেখা দিতে পারে, যা চাপ দিলেও ফ্যাকাশে হয় না - এটি একটি বিপদ সংকেত।

কিভাবে বুঝবো কারো ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস হয়েছে? 

(বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়াল ক্ষেত্রে) এবং খুব জোরে আসতে পারে। 

মনে রাখার সহজ উপায় কিছু সাধারণ লক্ষণ:

খুব জ্বর: অনেক বেশি তাপমাত্রার জ্বর, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা।

তীব্র মাথাব্যথা: সাধারণ মাথাব্যথার চেয়ে অনেক বেশি তীব্র, অসহ্য মাথাব্যথা।

গলা শক্ত হয়ে যাওয়া: ঘাড় নিচু করে বুকের দিকে চিবুক আনতে কষ্ট বা ব্যথা হওয়া (এটা খুবই কমন লক্ষণ)।

উজ্জ্বল আলোতে চোখে ব্যথা: আলো দেখলে চোখ জ্বালা করা বা ব্যথা লাগা।

বমি বমি ভাব বা বমি: মাথাব্যথা ও জ্বরের সাথে বমি হওয়া।

খুব বেশি ঝিমুনি বা জ্ঞান হারানো: ঘুম থেকে জাগানো কঠিন হয়ে যাওয়া, বিভ্রান্ত লাগা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

খিঁচুনি: শরীর অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁপা।

ত্বকে দাগ (সেপসিসের লক্ষণ): ছোট লাল বা বেগুনি দাগ/ফোঁটা দেখা দেওয়া যা চাপ দিলেও ফ্যাকাশে হয় না (একটি খুবই গুরুতর লক্ষণ)।

কী করা উচিত যদি সন্দেহ হয়?

সেকেন্ডও নষ্ট করা যাবে না! ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসে প্রতিটি মিনিট মূল্যবান। অবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে যেতে হবে।

চিকিৎসা: হাসপাতালে রোগীকে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক (সাধারণত শিরায় বা ইনজেকশনের মাধ্যমে) এবং অন্যান্য ওষুধ দ্রুত দেওয়া হবে। অনেক সময় তরল এবং অন্যান্য সাপোর্টও দিতে হয়। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হবে, তত ভালো ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

প্রতিরোধই সর্বোত্তম পথ:

ভাগ্যক্রমে, এই ভয়ংকর রোগ প্রতিরোধের শক্তিশালী উপায় আছে। 

টিকা (ভ্যাকসিন)

Meningococcal Vaccine: মেনিনজোকক্কাল ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে (বিভিন্ন টাইপের জন্য টিকা আছে যেমন A, C, W, Y এবং B)।

Pneumococcal Vaccine: নিউমোকক্কাল ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে (যা নিউমোনিয়া এবং মেনিনজাইটিস দুটোই করে)।

Hib Vaccine: হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে (বাচ্চাদের রুটিন টিকায় এটি থাকে)।

বাংলাদেশের শিশুদের জন্য সরকারি টিকাদান কর্মসূচিতে (EPI) Hib ভ্যাকসিন (পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিনের অংশ হিসেবে) এবং Pneumococcal ভ্যাকসিন (PCV) দেওয়া হয়। Meningococcal ভ্যাকসিন সাধারণত রুটিনে থাকে না, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে বা হজযাত্রীদের জন্য নেওয়া যেতে পারে - ডাক্তারের সাথে কথা বলে জেনে নিতে পারেন।

মনে রাখবেন

ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস খুবই জরুরি এবং জীবন-হুমকিস্বরূপ একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি।

উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলোর যেকোনো এক বা একাধিক দেখা দিলে অবশ্যই অবহেলা করবেন না, দ্রুত হাসপাতালে যান।

সঠিক সময়ে টিকা নেওয়াই হলো এই ভয়ংকর রোগ থেকে নিজেকে এবং অন্যদের রক্ষা করার সবচেয়ে ভালো উপায়।


এই লেখাটি সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা সহজে বুঝতে পারে, এমন ভাষায় এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যাতে গুগল সার্চেও এটি সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। সচেতনতাই পারে এই ভয়ংকর রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন বাঁচাতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url